ঝুমঝুম শব্দে হঠাত খেয়াল হল মাহমুদের।আজো সে রাবারের স্যান্ডেলের বদলে চামড়ার স্যান্ডেল পড়ে এসেছে।ভিজে নষ্ট হয়ে যাবে।কত্ত গুলো টাকা পানিতে ভিজবে,ধ্যাত।
মাহমুদ বসে আছে ডাঃফাতেমা ফার্মেসীতে।হাহাহা ফার্মেসী।
ছাত্রাবস্থায় রাস্তার ধারে ছোট ছোট ফার্মেসীর খুপ্রির মাঝে বসে থাকা ডাক্তারদেরকে দেখে সে হাসতো।একটা অবজ্ঞার ভাব করে তাকাতো তাদের দিকে।'আমি কখনোই এসব নালার উপরের দোকানে চেম্বার করব না'-কত বলেছে নিজেকে এই কথা।
আর আজ???
ছাত্রাবস্থায় রাস্তার ধারে ছোট ছোট ফার্মেসীর খুপ্রির মাঝে বসে থাকা ডাক্তারদেরকে দেখে সে হাসতো।একটা অবজ্ঞার ভাব করে তাকাতো তাদের দিকে।'আমি কখনোই এসব নালার উপরের দোকানে চেম্বার করব না'-কত বলেছে নিজেকে এই কথা।
আর আজ???
তবে ফার্মেসী হিসেবে এইটা বেশ ভাল।শহর থেকে কিছুটা দূরে।এক্টা সাজানো বাড়ির উঠানের এক কোনায়।ডাঃ ফাতেমা এই বাড়ির মেয়ে।অনেক বছর আগে তিনি এই এলাকায় প্র্যাক্টিস করতেন,কিন্তু সেই নাম এখনো রয়ে গিয়েছে সুনাম হিসেবে।
তাই সে এখানে প্র্যাক্টিস করতে চাইলে বাড়ির লোকজন তাতে সানন্দে রাজি হয়ে যায়।
তাই সে এখানে প্র্যাক্টিস করতে চাইলে বাড়ির লোকজন তাতে সানন্দে রাজি হয়ে যায়।
'তো প্রফেসর মাহমুদ,আপনি কোথায়?শীততাপহীন চেম্বারে?দেখলেন তো বাস্তবতা আর কল্পনায় কত ফারাক?'-কে যেন কানের কাছে বলে উঠে কথাগুলো।
ধুর হ **** অশ্লীল একটা গালি ছুড়লো সেই কন্ঠের দিকে।
ঝমঝম বৃষ্টি লাথি মারলো তার পেটে।এই কুত্তামারা বৃষ্টিতে ঠেকা না পরলে কেউই আসবেনা ডাক্তারের কাছে।
চোখের সামনে প্লেট ভরা পকোড়া নিয়ে হাজির হল বাবু।'এই নাও,দেখতো কেমন হয়েছে?'
'হুহ,ভালো।তা সস কই?'
'হুহ,ভালো।তা সস কই?'
স্যার,রোগী আসছে।
ঘোর ভাঙ্গলো মাহমুদের।
৪ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে চিন্তিত বাপ-মা হাজির হয়েছেন।বাচ্চার আকাশ-পাতাল জ্বর।
থার্মোমিটারে রিডিং দেখে অন্য পরীক্ষা করে দ্রুত ওষুধ লিখে দিল সে।
বাচ্চার মা যাওয়ার সময় বলল,এখানে তারা নতুন।টাকা পয়সার সমস্যা,পরে ভিজিট দিবে।
আলুর বেপারীর মত ত আর ভিজিট নিয়ে দর কষাকষি করতে পারে না,তাই অগত্যা 'আচ্ছা ঠিক আছে,বাসায় যান বাচ্চাটাকে অষুধ খাওয়ান'-বলে বাইরে এসে সিগারেট ধরানোর বৃথা চেস্টা করলো।
ঘোর ভাঙ্গলো মাহমুদের।
৪ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে চিন্তিত বাপ-মা হাজির হয়েছেন।বাচ্চার আকাশ-পাতাল জ্বর।
থার্মোমিটারে রিডিং দেখে অন্য পরীক্ষা করে দ্রুত ওষুধ লিখে দিল সে।
বাচ্চার মা যাওয়ার সময় বলল,এখানে তারা নতুন।টাকা পয়সার সমস্যা,পরে ভিজিট দিবে।
আলুর বেপারীর মত ত আর ভিজিট নিয়ে দর কষাকষি করতে পারে না,তাই অগত্যা 'আচ্ছা ঠিক আছে,বাসায় যান বাচ্চাটাকে অষুধ খাওয়ান'-বলে বাইরে এসে সিগারেট ধরানোর বৃথা চেস্টা করলো।
বাচ্চাটার জন্য খারাপ লাগছে,প্লেট ভরা পকোড়ার জন্য ও খারাপ লাগছে।
কতদিন হয়ে গেল তার আর বাবুর ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে।বাবুর আরেকটা নাম ছিল-রেমি।
প্রথম যেদিন ও ধ্রুব বলে ডাকলো সেদিন সে রেমি বলেছিল।তবে রেমি বলে খুব একটা ডাকা হয় নি পরে আর।আচ্ছা,এরা যেন কার উপন্যাসের চরিত্র?
প্রথম যেদিন ও ধ্রুব বলে ডাকলো সেদিন সে রেমি বলেছিল।তবে রেমি বলে খুব একটা ডাকা হয় নি পরে আর।আচ্ছা,এরা যেন কার উপন্যাসের চরিত্র?
কত সময় আগের কথা।ছাড়াছাড়ির পর দুজন হয়ে গেল দুই গ্রহের বাসিন্দা।সবার মুখে একটা প্রশ্নসুচক ভাব থাকায় পরিচিত মহলে যাওয়া আসা কমিয়ে দিয়েছিল।কেন হয়েছে-এইসব কাউকে জানতে দেয়নি সে।পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে।
একটা ঘটনার সাথে অনেক কিছুই জড়িয়ে থাকে।ফিউচার প্ল্যানিং বদলে গেল।নিজেকে ভাসিয়ে দিল তুমুল ব্যস্ততায়।পড়াশোনা,ট্রেনিং-এসবের মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রেখে নিজেকে যেন সে বারবার বলছিল-এক্টা মানুষ থাকা না থাকায় কিচ্ছু যায় আসে না।আসলেও কিচ্ছু যায় আসে না।শুধু ফাকা হয়ে যায় একটা ঘর।
হঠাত খুব ক্লান্ত বোধ করায় এইখানে আগমন।মাঝেমাঝে গতিময় জীবনে শ্লথ হয়ে যাবারো দরকার আছে।
হঠাত খুব ক্লান্ত বোধ করায় এইখানে আগমন।মাঝেমাঝে গতিময় জীবনে শ্লথ হয়ে যাবারো দরকার আছে।
'আমি সন্ন্যাসী নই,দেবদাস নই।আমি একজন যোদ্ধা।আমি তোমাকে অনেক ঘৃণা করি কিন্তু ভালোবাসি তোমার সাথে কাটানো মুহূর্তুগুলো।'
তাই হয়তো ঝমঝমে বৃষ্টিতে রিকশা রাস্তার পাশে দাড় করিয়ে পূর্ণেন্দু পত্রীর সেই কবিতাটা আবৃত্তি করে আনমনে ঃ
"বুড়ো রিকশাওয়ালাকে,তুমিই বল,ওর জন্যই তো সেদিন,ওর জন্য,
গাড়িটাকে গর্তে ফেলে আর টান্তে না পেরে,অঝোর
বৃষ্টির ভিতরে রিকশোয়,রিকশোর পরদা টাঙ্গানো বাসর ঘরে,
তোমার বৃষ্টিতে আমি,আমার বৃষ্টিতে তুমি,ভিজতে ভিজতে,বাইরের
বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত ওই যে অনন্তকাল,কল্কাতার ব্যস্ততম
রাজপথের মাঝখানে অই যে আমাদের নিভৃত অন্ধকার ও রনাঙ্গন,
আমার লুটপাটের সুখ,তোমার সরবসান্ত হওয়ার উদ্ভাস,
বুড়ো রিকশাওয়ালাকে আরো দুটাকা বেশি দিলে কম পড়তো না কিছু,
আমরা তো তখন ভাগাভাগি করে নিয়েছি একশো বছরের
ভালোবাসা।"
গাড়িটাকে গর্তে ফেলে আর টান্তে না পেরে,অঝোর
বৃষ্টির ভিতরে রিকশোয়,রিকশোর পরদা টাঙ্গানো বাসর ঘরে,
তোমার বৃষ্টিতে আমি,আমার বৃষ্টিতে তুমি,ভিজতে ভিজতে,বাইরের
বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত ওই যে অনন্তকাল,কল্কাতার ব্যস্ততম
রাজপথের মাঝখানে অই যে আমাদের নিভৃত অন্ধকার ও রনাঙ্গন,
আমার লুটপাটের সুখ,তোমার সরবসান্ত হওয়ার উদ্ভাস,
বুড়ো রিকশাওয়ালাকে আরো দুটাকা বেশি দিলে কম পড়তো না কিছু,
আমরা তো তখন ভাগাভাগি করে নিয়েছি একশো বছরের
ভালোবাসা।"