যদি মাসে দু'হাজার টাকাও রোজগার করে বউদির হাতে তুলে দিতে পারতাম তাহলে বলতে বাধা থাকতো না; "চারজন মানুষের মুখে সাদা ভাত তুলে দেয়ার সামর্থ্য হয়েছে আমার, আমি আর বেকার নই।।" বন্ধু রনিকে কথাটা বলে উপরের দিকে তাকিয়ে সিগারেটে একটা টান দিল বলাই।।
সকাল সাড়ে নয়টা..... বড়দা বলাই এর শোয়ার রুমে ঢুকে একটানে গা থেকে কাথাটা সরিয়ে দিল।। পড়নের লুঙ্গিটা বলাই এর হাটু মারিয়ে উরুর দিকেই পৌঁছে ছিল।। হকচকিয়ে বিছানায় উঠে বসল বলাই, ডান হাতে চোখ কচলিয়ে সূর্যের দিকে তাকানোর ভঙ্গিতে তাকাল বড়দার দিকে।। বড়দা কিছু বা বলাই কিছু বলার আগেই কোথা থেকে ওর বউদি বড়দার পাশে এসে খাড়া।। কর্কস কন্ঠে বলতে শুরু করলেন বলাইকে, "সারাদিন কোন কাজ নেই, রাতভর জেগে থেকে কি সব ছাইপাস খাতায় লেখা আর নবাব পুত্রের মত অর্ধ বেলায় ঘুম থেকে উঠা, তারপর খেয়েই সেই মজনু না ফজনুর চায়ের দোকানে আড্ডা।। আরে দা........."
ঘরে অসুস্থ বাবা।। মা মারা গেছেন সে বছর পাঁচ হলো।। বড়দা আর বউদি, এই তাকে নিয়ে চারজনের সংসার।। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে বিএসসি কমপ্লিট করে ও এখন কমপ্লিটলি বেকার।। কোন কাজ নেই ওর তবুও ওই সব থেকে বেশি ব্যস্ত মানুষ।। বাজার করা, বাড়ির সকল ময়লা ফেলা, খড়ি চিড়ানো, কোন বন্ধুর ডাকে দৌড়ে যাওয়া আর সময় পেলেই মজনুর চায়ের দোকানে বসে থাকা ইত্যাদি ইত্যাদি তার নিত্য কারবার।। আরেকটা কাজ অবশ্য পারে তবে তা কারও বাহবা পাওয়ার যোগ্য নয়।। লেখালেখি করা আর এর মর্ম একমাত্র একজনই বুঝতে পেরেছে, সে ও নিজেই।।
***
পাশের ঘর থেকে বাবার ডাক পরলো, "বলাই আসছোস??" ওপাশের ঘর থেকে বলাই জোরে উত্তর করল, "হ্যাঁ, কেন কি হয়ছে??" "এদিকে আয় না, বাপ", বাবা ডাকলেন বলাইকে।।
বাবার ঘরে বলাই এর পদার্পণ।। বাবা শুয়ে ছিলেন।। বলাই বাবার পাশে বিছানার এক কোণায় বসল।। "কি বলবা??", জিজ্ঞেস করল বাবাকে।। "বাপ, একটা দেশি মোরগের মাংস খাইতে ইচ্ছে করছে।। তোর দাদাকে বলার সাহস হয়না।। আমার ঘরে আসলেও ঐ লেজটা (বউ) সাথে আসে।। কিছু বলতে পারি না তোর দাদাকে।।", বলতে বলতে বিছানায় উঠে বসলেন উনি, "পারবি একটা মোরগ আনতে??" "দেখি, কাল না হয় পরশু নিয়ে আসবো নি।। রাত দশটা বেজে গেছে এখন ঘুমাও...." বলাই বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে রওনা হল।। আজ রাতে তার খাওয়া হবে না।। বড়দা বউদিকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে গেছেন আজ, সকালে যা রান্না করে রেখে গিয়েছিলেন তা দুপরে বাবা আর সে খেয়ে যা ছিল তা বাবার জন্য বেরে রেখে গিয়েছিল বলাই।। রাতটা শুধু জল আর দুপুরে অর্ধেক টেনে নিভিয়ে রেখে যাওয়া সিগারেটের বাকি অংশটুকু টেনেই কাটিয়ে দিতে হবে।।
পাশের ঘর থেকে বাবার ডাক পরলো, "বলাই আসছোস??" ওপাশের ঘর থেকে বলাই জোরে উত্তর করল, "হ্যাঁ, কেন কি হয়ছে??" "এদিকে আয় না, বাপ", বাবা ডাকলেন বলাইকে।।
বাবার ঘরে বলাই এর পদার্পণ।। বাবা শুয়ে ছিলেন।। বলাই বাবার পাশে বিছানার এক কোণায় বসল।। "কি বলবা??", জিজ্ঞেস করল বাবাকে।। "বাপ, একটা দেশি মোরগের মাংস খাইতে ইচ্ছে করছে।। তোর দাদাকে বলার সাহস হয়না।। আমার ঘরে আসলেও ঐ লেজটা (বউ) সাথে আসে।। কিছু বলতে পারি না তোর দাদাকে।।", বলতে বলতে বিছানায় উঠে বসলেন উনি, "পারবি একটা মোরগ আনতে??" "দেখি, কাল না হয় পরশু নিয়ে আসবো নি।। রাত দশটা বেজে গেছে এখন ঘুমাও...." বলাই বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে রওনা হল।। আজ রাতে তার খাওয়া হবে না।। বড়দা বউদিকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে গেছেন আজ, সকালে যা রান্না করে রেখে গিয়েছিলেন তা দুপরে বাবা আর সে খেয়ে যা ছিল তা বাবার জন্য বেরে রেখে গিয়েছিল বলাই।। রাতটা শুধু জল আর দুপুরে অর্ধেক টেনে নিভিয়ে রেখে যাওয়া সিগারেটের বাকি অংশটুকু টেনেই কাটিয়ে দিতে হবে।।
***
বিছানার এপাশ ওপাশ করছে বলাই।। ফুল স্পীডে পাখা ঘুরছে, দখিনের জানালাটাও খোলা।। শমশম বাতাস বইছে বাহিরে।। এত বাতাসেও যেন অস্থির লাগছে ওর।। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই সকাল হবে।। একটা নতুন দিন শুরু হওয়ার প্রতিক্ষায় রাতের প্রহর গোনা।। সকাল হলেই বাবা ও তার জন্য রান্না করতে হবে।। বাবার খেতে চাওয়া মোরগের জন্য টাকা ব্যবস্থা করতে হবে।। কার কাছে চাওয়া যায়!! কেই বা কোন ভরসায় দুই- আড়াইশো টাকা তাকে ধার দিবে, কোন ভরসায় দিবে।। জীবনের এতগুলো প্রহরের আজ এই প্রহরে নিজের বেকারত্বের অবজ্ঞাকে উপলব্ধি করছে বলাই।। তার জন্য অবশিষ্ট কিছু রাখা নেই, রংধনুর সমস্ত রংই যেন আজ বিবর্ণ।।
বিছানার এপাশ ওপাশ করছে বলাই।। ফুল স্পীডে পাখা ঘুরছে, দখিনের জানালাটাও খোলা।। শমশম বাতাস বইছে বাহিরে।। এত বাতাসেও যেন অস্থির লাগছে ওর।। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই সকাল হবে।। একটা নতুন দিন শুরু হওয়ার প্রতিক্ষায় রাতের প্রহর গোনা।। সকাল হলেই বাবা ও তার জন্য রান্না করতে হবে।। বাবার খেতে চাওয়া মোরগের জন্য টাকা ব্যবস্থা করতে হবে।। কার কাছে চাওয়া যায়!! কেই বা কোন ভরসায় দুই- আড়াইশো টাকা তাকে ধার দিবে, কোন ভরসায় দিবে।। জীবনের এতগুলো প্রহরের আজ এই প্রহরে নিজের বেকারত্বের অবজ্ঞাকে উপলব্ধি করছে বলাই।। তার জন্য অবশিষ্ট কিছু রাখা নেই, রংধনুর সমস্ত রংই যেন আজ বিবর্ণ।।
***
"দোস্ত, কিছু টাকা হবে তোর কাছে??" আমতা আমতা করে মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করল বলাই নিবারনকে।। "কেন, কি করবি??" উত্তর করল নিবারন।। "না মানে, এতটু দরকার ছিল।।" প্রতিউত্তর বলাই এর।। "কে টাকা দিবে তোর মত বাউন্ডোলে ছেলেকে?? বিএসসি করেও একটা চাকরিও পেলিনা, কোন কাজও করিস না।। তোকে দশ টাকা ধার দিতেও দশ বার যে কেউ ভাববে, টাকাটা তুই দিতে পারবি না!!" নিবারন বলতে বলতে চায়ের কাপে চুমুক দিল।। এমন কথা কখনও কারো কাছ থেকে শুনতে হবে তা কখনও ভাবেনি বলাই।। সে কথা না বারিয়ে মাথা নিচু করেই সেখান থেকে উঠে এল।।
"দোস্ত, কিছু টাকা হবে তোর কাছে??" আমতা আমতা করে মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করল বলাই নিবারনকে।। "কেন, কি করবি??" উত্তর করল নিবারন।। "না মানে, এতটু দরকার ছিল।।" প্রতিউত্তর বলাই এর।। "কে টাকা দিবে তোর মত বাউন্ডোলে ছেলেকে?? বিএসসি করেও একটা চাকরিও পেলিনা, কোন কাজও করিস না।। তোকে দশ টাকা ধার দিতেও দশ বার যে কেউ ভাববে, টাকাটা তুই দিতে পারবি না!!" নিবারন বলতে বলতে চায়ের কাপে চুমুক দিল।। এমন কথা কখনও কারো কাছ থেকে শুনতে হবে তা কখনও ভাবেনি বলাই।। সে কথা না বারিয়ে মাথা নিচু করেই সেখান থেকে উঠে এল।।
চৈত্রের দুপুর।। খা খা মাটি ফাটা রোদের তাপ।। ক্ষণে ক্ষণে আউলা বাতাসে মেঠো পথের ধুলো উড়ে বাতাসে ভেসে বেড়ানো।। বলাইয়ের কালো ছেড়া চটি জোড়া ধুলোয় শ্বেত বর্ণ রুপ নিয়েছে।। পড়নের ঢিলে শার্টটা বাতাসে দোল খাচ্ছে।। মাথাটা তখনও নুয়ে রেখেছে বলাই।। কিছু বলার নেই।। কি বলবে ও, কিইবা বলার আছে ওর।। কার কাছে যাবে, কার থেকে টাকা চেয়ে বাবার জন্য মোরগ কিনে নিয়ে যাবে।। আর বন্ধুরা নিবারনের মত কিছু শুনাবে না তার ভরসা কি!! ও ভাবছে, একটি কাচের টুকরোকে ভাঙ্গার জন্য যেমন একটি ছোট্ট পাথর টুকরোই যথেষ্ট তেমনি সমস্ত বন্ধুর উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যেতে একজন বন্ধুর কটু ব্যবহারই যথেষ্ট।।